তৃতীয় প্রজন্ম Third Generation (১৯৬৫-৭০ খ্রি.)

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | NCTB BOOK

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (Third Generation of Computers) প্রায় ১৯৬৫ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) ব্যবহার করা শুরু হয়, যা কম্পিউটারের আকার ও বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে আনে এবং এর কার্যক্ষমতা ও গতি অনেক বৃদ্ধি করে। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ব্যবহার কম্পিউটার শিল্পে বিপ্লব ঘটায় এবং আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি স্থাপন করে।

তৃতীয় প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) ব্যবহার:

  • তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে ট্রানজিস্টরের পরিবর্তে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহার করা হয়, যা ছোট সিলিকন চিপে হাজার হাজার ট্রানজিস্টর যুক্ত করে।
  • IC-এর ব্যবহার কম্পিউটারের আকার ও বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে দেয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

কম্পিউটারের আকার ছোট হওয়া:

  • এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় অনেক ছোট এবং হালকা ছিল, ফলে এগুলি সহজেই ইনস্টল এবং ব্যবহার করা সম্ভব ছিল।

উন্নত অপারেটিং সিস্টেম:

  • তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে উন্নত অপারেটিং সিস্টেম (OS) ব্যবহৃত হয়, যা মাল্টি-প্রোগ্রামিং এবং মাল্টি-টাস্কিং সুবিধা প্রদান করে।
  • কম্পিউটার একাধিক প্রোগ্রাম একসাথে চালাতে এবং বিভিন্ন ব্যবহারকারীকে সমর্থন করতে সক্ষম হয়েছিল।

উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা:

  • এই প্রজন্মে FORTRAN, COBOL, এবং BASIC এর মতো উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হতো, যা প্রোগ্রামিংকে আরও সহজ এবং কার্যকর করত।
  • কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সহজ হওয়ার কারণে এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে প্রোগ্রামিং করা আগের চেয়ে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ব্যবহারের সহজতা এবং কার্যকারিতা:

  • তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো আরও নির্ভুল এবং দ্রুত ছিল। IC-এর ব্যবহার কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা এবং নির্ভুলতা বৃদ্ধি করে।
  • কম বিদ্যুৎ খরচের কারণে এগুলির ব্যবহার আরও কার্যকর হয়ে ওঠে, এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় সহজ ছিল।

তৃতীয় প্রজন্মের উদাহরণ:

  • IBM System/360: এটি তৃতীয় প্রজন্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এটি ছিল প্রথম কম্পিউটার যা বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারত এবং বিভিন্ন মডেল হিসেবে উপলব্ধ ছিল।
  • Honeywell 6000 series এবং PDP-8: এই কম্পিউটারগুলোও তৃতীয় প্রজন্মের আইসির ভিত্তিতে তৈরি এবং কার্যকরভাবে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতো।

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের গুরুত্ব:

  • মাল্টি-প্রোগ্রামিং ও মাল্টি-টাস্কিং: কম্পিউটারে একসঙ্গে একাধিক প্রোগ্রাম চালানো এবং বিভিন্ন ব্যবহারকারীকে সাপোর্ট দেওয়ার ক্ষমতা তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল।
  • বাণিজ্যিক ব্যবহার: এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলির আকার ছোট হওয়ার কারণে, এগুলি ব্যবসা, শিক্ষা, এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
  • উন্নত প্রোগ্রামিং সুবিধা: উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহারের ফলে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট আরও সহজ এবং কার্যকর হয়ে ওঠে, যা পরবর্তী সময়ে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির বিকাশে সহায়ক হয়।

তৃতীয় প্রজন্মের সীমাবদ্ধতা:

  • যদিও তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে IC ব্যবহারের কারণে আকার ও বিদ্যুৎ খরচ কমেছিল, কিন্তু সেই সময়ে প্রযুক্তিগতভাবে আরও ছোট আকারের IC তৈরি করা চ্যালেঞ্জিং ছিল।
  • উন্নত অপারেটিং সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও, কিছু জটিল কাজের জন্য এটির ক্ষমতা সীমিত ছিল।

সারসংক্ষেপ:

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো কম্পিউটার প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ এতে IC-এর ব্যবহার কম্পিউটারের আকার, কর্মক্ষমতা, এবং কার্যকারিতার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এনেছিল। এই প্রজন্মের প্রযুক্তি পরবর্তীতে আরও উন্নত চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

Content updated By
Promotion